মামার বউ

 আমি তারভীর আমরা থাকি এক বাড়িতে—নিচে আমি আর মা, আর উপরে মামা-মামি। তবে মামা বেশিরভাগ সময় বাইরে, অফিস বা ব্যবসার কাজে।


এক বিকেলে, আমি যখন মোবাইলে গান শুনে শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ ওপর থেকে ডাক—


— "তানভীর, একটু আসবি? একটা বাক্স উঠাতে পারছি না…"


আমি তাড়াতাড়ি ওপরে গেলাম। দরজা খোলা, আমি ঢুকে দেখি বৌদি একা, হালকা সালোয়ার কামিজ পরে আছে। কিন্তু চোখে-মুখে একটু ঘেমে গেছে, চুল এলোমেলো।


— "এই বাক্সটা একটু নামিয়ে দে তো," — সে বললো।


আমি বাক্স ধরলাম, আর হঠাৎ খেয়াল করলাম—বৌদির কামিজটা ঘামে ভিজে গেছে কিছুটা। বুকের কাছে ব্রার রেখাটা একটু স্পষ্ট। চমকে উঠে চোখ ফিরিয়ে নিলাম, কিন্তু সে হেসে বললো,


— "এই বয়সে ছেলেরা কি আর কিছু লুকাতে পারে?"

— আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, "না বৌদি, মানে... কিছু না..."


সে হাসলো। একরকম দুষ্টু কিন্তু নরম হাসি। তারপর আস্তে করে বললো,


— "তুই এখন অনেক বড় হয়ে গেছিস রে... বুঝি না ভাবিস?"


আমার মুখ লাল হয়ে গেল। আমি কিছু বলতে পারলাম না। 

বাক্সটা নিচে নামিয়ে আমি দরজা পর্যন্ত এসে দাঁড়ালাম। যাবো কি না ঠিক করছিলাম। এমন সময় বৌদি আবার ডেকে উঠলো—


— "তানভীর, একটু দাঁড়া তো। তোকে কিছু জিজ্ঞেস করব।"


আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। বৌদি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, বাইরে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ সে বলল,


— "তুই আগে আমার সাথে এত কথা বলতিস… এখন যেন কেমন গুটিয়ে গেছিস!"


আমি একটু হেসে বললাম,

— "না বৌদি, আসলে বড় হয়ে গেছি তো… তাই আর... আগের মতো ভাবি না।"


সে তাকিয়ে বলল,

— "বড় হলে কি মন ছোট হয়ে যায়?"


তার কথায় একটা গভীরতা ছিল, যেন সে শুধু কথার খেলা খেলছে না, কিছু বোঝাতে চাইছে। আমি চুপ করে রইলাম।


বৌদি আস্তে করে সামনে এসে দাঁড়াল। খুব কাছ থেকে বলল,

— "তুই কি আমায় এড়িয়ে চলিস?"


আমি একটু নড়ে উঠলাম, বললাম,

— "না, মানে… না বৌদি।"


সে আবার হেসে বলল,

— "আমিও তো তোর চেয়ে অনেক বড় না, তাই না? তিন-চার বছর হবে… তোর সঙ্গে তো আমার মন খুলে কথা বলতে ভালো লাগে।"


আমার বুক ধড়ফড় করছিল। যেন প্রতিটা শব্দ শরীরে কাঁপন তুলে দিচ্ছে। তবুও আমি নিজেকে সামলে বললাম,

— "তুমি চাইলে আমি আগের মতোই কথা বলব।"


বৌদি এবার আমার হাতটা আলতো করে ধরল। বলল,

— "তুই যখন ছোট ছিলি, তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম… এখন তুই বড় হয়েছিস, তবুও সেই স্নেহটা আছে… তবে এখন তো তুইও বুঝিস… সম্পর্ক যেমন থাকে, অনুভবটা কিন্তু বদলে যায়…"


আমার মুখ শুকিয়ে গেল। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। সে আস্তে করে আমার কাঁধে হাত রাখল।


ঘরটা নিঃশব্দ, ঘড়ির কাঁটার টিকটিক ছাড়া কিছু শোনা যাচ্ছে না।


বৌদি এবার বলল,

— "আজ রাতে উপরে খাবি? আমি রাঁধছি… শুধু আমাদের জন্য… তুই আসবি?"


আমি মাথা নাড়ালাম।


সে আবার বলল,

— "তোর জন্য একটা নতুন রেসিপি ট্রাই করছি… খেয়ে বলবি কেমন লাগল।"


আমি জানালাম, আসব।

সেদিনের ঘটনার পর থেকে বৌদির সামনে গেলেই বুকটা ধুকপুক করে। একটা টান টের পাই, অথচ কিছু বলতে পারি না।

বৌদিও যেন বুঝে গেছে, কিন্তু কিছু বলেনি।


দুই দিন পর সন্ধ্যায় আমি কলেজ থেকে ফিরে দেখি, উপরে বৌদি একা। মা বাইরে গেছেন, বাসায় তালা।


বৌদি নিচে এসে দরজা খুলে দিলো, বলল—

— "তোর মা এখনো আসেনি? উপরে চা খাস চল?"


আমি একটু ইতস্তত করলাম, কিন্তু না করলাম না।


ঘরে ঢুকে দেখি, ঘরটা হালকা আধারে ঢাকা, জানালা খোলা—হালকা বাতাসে পর্দা দুলছে। বৌদি আমার সামনে এক কাপ চা আর বিস্কুট দিলো। বসে বলল,

— "তুই এখন অনেক বদলে গেছিস… কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছিস।"


আমি হেসে বললাম,

— "না, এমনি… কলেজের টেনশন।"


বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— "তোর চোখ তো অন্য কিছু বলছে।"


আমি চুপ। বৌদি ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এলো। খুব কাছে এসে বলল—

— "তুই কি আমায় ভয় পাচ্ছিস, তানভীর?"


আমি না জানি কীসের সাহসে বলে ফেললাম—

— "ভয় না… একধরনের টান।"


বৌদি থমকে গেল, তারপর হাসল। বলল—

— "ভালো… ভয় নয়, টান। আমি বুঝেছিলাম। কিন্তু তুই বলবি কবে, তাই দেখছিলাম।"


তারপর হঠাৎ করে আমার গালে হালকা ছুঁয়ে দিলো।


সেই প্রথম স্পর্শ।


আমার গা কাঁপছিল, কিন্তু বৌদির চোখে ছিল একরাশ নরম স্পষ্টতা। বলল—

— "তোর সঙ্গে কিছু হবে কিনা জানি না, কিন্তু তুই এখন আমার খুব কাছের একজন… বুঝলি?"


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url