বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক জসীমের মৃত্যুর মতোই হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তার ছেলে সঙ্গীতশিল্পী এ কে রাতুল। আজ রবিবার (২৭ জুলাই) বিকেল পাঁচটার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাতুলের অকাল মৃত্যু যেন বাবার মৃত্যুর করুণ ছায়াই পুনরাবৃত্ত করল। নায়ক জসীম ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। সেই মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র হারিয়েছিল এক সাহসী, জনপ্রিয় ও বহুমাত্রিক অভিনেতাকে।
রাতুলের মৃত্যু প্রসঙ্গে জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তরার একটি জিমে ব্যায়াম করার সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে লুবনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালটির সুপারভাইজার মাসুদ রানা জানান, রতুলকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। রাতুলকে দ্রুত আইসিইউতে নেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রতুলকে বনানী কবরস্থানে তার পিতা জসীমের কবরেই দাফন করা হবে। বর্তমানে তার মরদেহ উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের নিজ বাসায় রাখা হয়েছে, দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
রাতুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তার পরিবার, বন্ধু, সহশিল্পী ও ভক্তরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শুভাকাঙ্ক্ষীরা শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছেন। শোকাহত পরিবেশে জানাজা শেষে তাকে বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
সংগীতশিল্পী আলিফ আলাউদ্দীন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘হঠাৎ রাতুলের মৃত্যুসংবাদ শুনে আমি স্তব্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত। তিনি দেশের অন্যতম সেরা শব্দ প্রকৌশলী ও ওন্ড ব্যান্ডের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর ছিলেন। আমাদের সংগীতাঙ্গন থেকে একটি আলো হারিয়ে গেলে। তাঁর পরিবার, বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা রইল।’
সংগীতশিল্পী ফাতেমা তুয যাহরা ঐশী লিখেছেন, ‘ওন্ড’ এর গান আর শুনতে পারবো না! রাতুল আমার দেখা সবচেয়ে বিনয়ী সঙ্গীতশিল্পীদের একজন। আমি বিশ্বাসই করতে পাচ্ছি না তিনি আর নেই। জীবন এত ছোট এবং অপ্রত্যাশিত। শান্তিতে বিশ্রাম নিন রাতুল।’
চিত্রনায়ক জসীমের তিন ছেলে—এ কে রাহুল, এ কে রাতুল এবং এ কে সামী—সবারই সংগীতের প্রতি গভীর টান রয়েছে। তারা সকলে ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে জড়িত।
রাহুল ‘ট্রেনরেক’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট এবং ‘পরাহো’ ব্যান্ডের ড্রামার। রাতুল ও সামী ছিলেন ‘ওইনড’ ব্যান্ডের সদস্য। সামী ড্রামার হিসেবে যুক্ত, আর রাতুল ছিলেন ব্যান্ডটির ভোকাল ও বেজ গিটারিস্ট।
উল্লেখ্য, রাতুলের বাবা চিত্রনায়ক জসীম মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মারা যান। খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে ওঠা এই জনপ্রিয় অভিনেতা মৃত্যুর দুই যুগ পরও দর্শকের মনে অম্লান হয়ে আছেন। রাতুলের মৃত্যু যেন বাবার মতোই সময়ের আগেই থেমে যাওয়া আরেকটি জীবন।
0 Comments